খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কয়েকজন বিচারপতির আচরণের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে, এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে : সুপ্রিম কোর্ট
  সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক বিকালে
  ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
দুই অফিস সহকারীকে পিটিয়ে জখম

ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অবরুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক সাতক্ষীরা

নোটিশ করেও অবৈধ স্থাপনা ভেঙে না নেওয়ায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নাজিমগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। তবে মঙ্গলবার(৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যেয়ে অবরুদ্ধ হন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাস।

এ সময় বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ভূমি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শহীদুল ইসলাম ও অফিস সহকারী রণজিৎ মন্ডলকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। তাদেরকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে হামলাকারীরা বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কাঁকশিয়ালী ও যমুনা নদীর চরে বসবাসরত ভূমিহীনদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভাঙা ও কোটি টাকার মালামাল লুটপাটের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে বিক্ষোভ করিয়ে তার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

নাজিমগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও শাহজাহান আলী জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার উজয়মারি গ্রামের সুরত আলীর ছেলে নাজিমগঞ্জ বাজারের সাঈদুল বস্ত্রালয়ের মালিক সাঈদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম শীতলপুর মৌজার ৭৭৮ দাগের বিআরএস-১ খতিয়ানের প্রায় দেড় বিঘা জমি দখল করে সেখানে গুদামঘর ও বাসাবাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিয়ে আসছেন। একইভাবে হোমিও চিকিৎসক ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন একইভাবে পেরিফেরি জমি জবরদখল করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা বানিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাঈদুৃর বস্ত্রালয়ের মালিকরা আবারো ১৬শতক জমি দখল করে সেখানে গুদামঘর বানাতে গেলে উপজেলা ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে বসন্তপুর ভূমি অফিসের কর্মক বাধা দেন। স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাকর্মীকে নিয়ে তারা ১৫সেপ্টেম্বর রাতে গুদামঘরের ছাদ ঢালাই করে ফেলে।

একপর্যায়ে সাঈদুর বস্ত্রালয়ের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বসন্তপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ আলী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানান। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের সার্ভেয়র মিজানুর রহমান সাঈদুর বস্ত্রালয়ের মালিক মনিরুল ইসলাম মনির বাড়ির চারতলার ভাড়াটিয়া হওয়ার সুবাদে বিষয়টি দফা রফা করে ফেলায় ওই ঘটনায় মামলা হয়নি। এ দুর্বলতার সূযোগে ও মিজানুর রহমানকে ম্যানেজ করেই নাজিমগঞ্জ বাজারে একের পর এক জায়গা দখলের হিড়িক পড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই দুই ব্যবসায়ি আরো জানান, নাজিমগঞ্জ বাজারের অবৈধ স্থাপনা ভাঙার জন্য গত ২১ নভেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ১৬০৯ ,১৬১১, ১৬১২ নং স্মারকে অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার জন্য সাইদুল বস্ত্রালয়ের মালিক মালিক সাইদুল ইসলাম ,সিরাজুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম মনি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমান এবং জাহাঙ্গীর হোসেনকে নোটিশ দেন।

নোটিশ পাওয়ার পরও অবৈধ স্থাপনা ভেঙে না নেয়ায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি ) অমিত কুমার বিশ্বাস তার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যান। বাজারে যাওয়ার পর নোটিশপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা খুলে দিলেও অবৈধ স্থাপনা ভাঙতে গেলে বাধা দেন। অবরুদ্ধ করে রাখা হয় সহকারী কমিশনার অমিত কুমার বিশ্বাস এবং তার অফিসের দুই কর্মচারি শহীদুল ও রণজিৎ মন্ডলকে। বাক বিতন্ডার একপর্যায়ে নিরপত্তা প্রহরী শহীদুল ইসলাম ও অফিস সহকারী রণজিৎ মন্ডলকে মারপিট করা হয়। তাদেরকে তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে অভিযান বন্ধ রেখে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর এলাকায় ফিরে আসেন সহকারী কমিশনার ও পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে অবস্থা বেগতিক বুঝে অবৈধ স্থাপনার মালিকরা কাঁকশিয়ালী ও যমুনা নদীর চরে বসবাসরত ৩০থেকে ৪০ জন ভূমিহীন নারী ও পুরুষকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করান। মিছিলে ওই সব ব্যবসায়িদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙে কাটি টাকার মালামাল লুটপাটের অভিযোগ এনে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, এমন কোন ঘটনা তার জানা নেই। কেউ অভিযোগ না দেয়ায় কোন মামলাও হয়নি।

কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস জানান, তাকে অবরুদ্ধ করা ও তার অফিসের দুই কর্মীকে মারপিটের ঘটনার পর নাজিমগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আগামীকাল বুধবার হামলাকারী ও সংশ্লিষ্ট অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা বাজারে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিজ নিজ অবৈধ স্থাপনা ভেঙে নেওয়ার অঙ্গীকার করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ব্যত্যয় হলে অবশ্যই থানায় মামলা করা হবে।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!